গ্রোথ স্টক ভ্যালুয়েশন

সাম্প্রতিক কালে দ্য ইকনমিস্ট একটা লেখা পাবলিশ করেছে, গত দশ বছরে ভ্যালু কোম্পানিগুলির চাইতে গ্রোথ কোম্পানিগুলি বেশি ভালো পারফর্ম করেছে। নিচে গ্রাফটিঃ

ভ্যালু কোম্পানি হচ্ছে সেগুলি যাদের ফান্ডামেন্টাল ভালো, অর্থাৎ কাগজ পত্রের হিসাব ক্লিয়ার, লাভ করতেছে, এবং লং রানে আরো ভালো করবে।

আর গ্রোথ কোম্পানি হল সেগুলি, যাদের তাড়াতাড়ি গ্রোথ সম্ভাবনা বেশি, কিন্তু তাদের দাম বেশি।

এই দুই ধরণের কোম্পানির মধ্যে ভ্যালু কোম্পানিতে ঝুঁকির পরিমাণ কম।

গ্রোথ কোম্পানিগুলির এত ভালো পারফর্ম করার কারণ কী, বিশেষত ইদানীং কালে?

১। ইন্টারনেট ও টেকনোলজি ভিত্তিক কোম্পানিগুলির আবির্ভাব, এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে গেছে পৃথিবীতে।

২। ইলেকট্রিক কার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ক্লাউড, সাস, ক্রিপ্টো-ব্লকচেইন, জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং এইসব প্রযুক্তি নির্ভর যেসব বিজনেস আছে, তাদের ব্যবসা হচ্ছে ভবিষ্যতকে লক্ষ করে। এখনো তারা প্রফিট না করতে পারলেও তাদের গ্রোথ হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতের দুনিয়ায় তাদের ব্যবসা বেশি হবে। সেই জিনিসকে সামনে রেখেই ইনভেস্টররা এতে ইনভেস্ট করছেন। এই কারণে তাদের স্টকের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

৩। এসব স্টকের দাম কি ওভার ভ্যালুড? বলা যায় টেসলার স্টকের কথা। ৯৮০ ডলারের মত ছিল কয়েক মাস আগে, এখন দুই হাজার ডলারের উপরে। টেসলা বিষয়ে, যখন ৯৮০ তে ছিল তখন অনেক এনালিস্ট বলেছিলেন এর ভালো দাম ৭০০-৮০০ হতে পারে।

সেপ্টেবর ১৯, ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০, এক বছরে টেসলার স্টক প্রাইস

বি দ্রঃ এখানে প্রাইস ৪৪৯ দেখাচ্ছে কারণ সম্প্রতি তারা এক স্টক ৫ ভাগে ভাগ করেছে। অর্থাৎ এখনের ৪৪৯ মানে আগের স্টকের ৫ ভাগের এক ভাগ। দাম বেশি হয়ে গেলে, বেশি ইনভেস্টর পেতে কোম্পানিগুলি এমন ভাগ করতে পারে। যেমন এই ভাগ না হলে, স্টকের দাম থাকত ২২৪৫ ডলার। এটারে ৫ ভাগ করে দেয়ায়, এখন রিটেইল ইনভেস্টররা বেশি সহজে পারবেন।

যাই হোক, কেউ ঠিক এক বছর আগে ৫০ হাজার ডলারের টেসলা নিয়ে থাকলে আজকে তার হতো ৪,৫৮,১৬৩ ডলার।

২০১২ তে ৫.৫৮ ডলারে কেউ যদি ৫০ হাজার ডলার টেসলায় ইনভেস্ট করতেন, তাহলে তার হতো, ৮৯৬০ শেয়ার। মানে বর্তমান হিসাবে, ৪৪৯ * ৮৯৬০ = ৪০২৩০৪০ ডলার। মাত্র ৮ বছরে, বসে।

এইসব টেক কোম্পানিগুলিতে ভ্যালুয়েশন করা কঠিন। কারণ বিদ্যমান পদ্বতিতে দেখলে এদের ওভার ভ্যালুড মনে হয়। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ২০১০ সালে জাপানিজ জায়ান্ট টয়োটার সেলস ছিল ২০০ বিলিয়ন, আর টেসলার ছিল ২০০ মিলিয়ন মাত্র।

টেসলার ক্ষেত্রে, মনে রাখতে হবে এটি গাড়ির কোম্পানি না, ইনোভেটিভ টেক কোম্পানি। ইলেকট্রিক কারের ব্যবসায় তাদের অভিজ্ঞতা সবচাইতে বেশি। ক্লিন এনার্জি, ব্যাটারি, এবং ইলেকট্রিক কার, এই তিনের মাধ্যমে তারা একটা সাস্টেইনেবল বিজনেস মডেলে কাজ করছে।

এখনকার যে ইলেকট্রিক কারের ব্যবসা বড় হচ্ছে এটা তারা আগেই অনুমান করতে পেরেছিল।

ফলে, তাদের ভ্যালুয়েশন সেই হিসাবেই করতে হবে।

একটা ইন্টারেস্টিং ভ্যালুয়েশন করেছে টেসলার এআরকে ইনোভেশন, নিচে তার সারমর্মের ছবি,

তাদের অনুমান ২০২৪ এর মধ্যে টেসলার প্রাইস হবে ৭০০০ ডলার।

তাদের এনালাইসিস যে সত্যি হবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ তারা যে ভ্যারিয়েবলগুলি বিবেচনায় নিয়েছে ও বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, এর বাইরেও আরো নানা কিছু থাকে বাস্তব দুনিয়ায়।

কিন্তু এটা একজনকে সাহায্য করতে পারে টেসলার ভ্যালুয়েশন নিয়ে ভাবার সময়ে।

ইনোটিভ প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানির ক্ষেত্রে, ঠিক ঠাক (মানে কাছাকাছি) তাদের ভ্যালুয়েশন করতে হলে ভবিষ্যৎ গ্রোথ সম্ভাবনা, প্রযুক্তিটির বর্তমান অবস্থান, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলিও মাথায় রাখতে হয়। এইসব জিনিশ অনুমান করা কঠিন।

ভিন্ন ধরণের ভ্যালুয়েশন মডেলে চিন্তা করতে হবে টেক ইনোভেটিভ কোম্পানিদের ক্ষেত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *